পীর হাবিবুর রহমান
অকাল প্রয়াত জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ প্রসংগ এলেই তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের প্রতি অনেকের চরম বিদ্বেষপূর্ন লেখা,অসভ্য মন্তব্য দেখি। একদল অন্ধকে তাকে ধুয়ে মুছে সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত করতে দেখি। আত্নমর্যাদাশীল নারী হুমায়ুন আহমেদের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন বিচ্ছেদের ১৬বছর পর ভালোবেসে বিয়ে করেছেন,এটাকে আমরা সবাই অভিনন্দিত করেছি।
আমি অবাক হয়ে দেখেছি এখানেও অনেকে মেহের আফরোজ শাওনকে অপ্রাসংগিকভাবে টেনে এনে সমালোচনা করেছেন।কারন কি? আমি বুঝিনা। হুমায়ুনের বিচ্ছেদে বিয়েতে মৃত্যুতে সকল অপরাধের অপরাধী যেনো শাওন। তার মৃত্যুদন্ড চাওয়ার বাকি রেখেছেন অনেকে। একদল নারীর কাছে শাওন যেনো সতীন,আর একদল পুরুষের যেনো পরাজয়ের গ্লানি, আর্তনাদ!
আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরীনও গুলতেকিনের বিয়ের সংবাদে মানুষের অভিনন্দনকে যেনো সইতে পারেননি!প্রশ্ন তুলেছেন তার ও বয়স গুলতেকিনের সমান প্রায়,কিন্তু তিনি বিয়ে করলে নাকি সবাই চীৎকার করে উঠতো। তসলিমা যতোটা আলোচিত পরিচিত ততোটা বড় গুনী লেখক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু তার বিয়ে করার প্রেম করার অধিকার আছে। তার সমালোচক বা বিরোধীরা সরব হলেও তার বিশাল ভক্ত আছেন। তারা ভয়ে সরব হননা।তিনি বিয়ে করতেই পারেন,কে কি বলবে বুঝিনা!তিনিতো অনেক বিয়ে কনেছিলেন। কেউতো কিছু বলেনি!যা বলার তিনি নিজেই আত্নজীবনী ক লিখে বলেছেন!তিনি নিশ্চয় বিয়ে করতে পারবেন,সব ইস্যুতে নিজেকে আলোচনায় না আনলেই হবে।
যাক মেহের আফরোজ শাওনকে নিয়ে লিখছিলাম। তারতো কোন অপরাধ আমি দেখিনা!আর তার বয়সে আমার বা আপনার মেয়ে এমন ঘটনা ঘটালে মনের অবস্হা কেমন হতো ভেবেছেন? শাওনের মা তহুরা আলী ৯৬সালে এমপি ছিলেন।বাবা মোহাম্মদ আলী প্রকৌশলী। ছাত্রলীগ দিয়ে জীবন শুরু, দু:সময়ের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। আমার লেখার ভক্ত হিসেবে কয়েকবার ফোনে কথা বলেছেন। একবার প্রতিদিন অফিসে এসেছেন।
তাদের আদরের মেয়ে শাওন। অসাধারন প্রতিভাবান। স্থপতি। অভিনয় গানে বিরল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। নিজে বা পারিবারিক ভাবে বিয়ে করলে প্রতিভাবান রাজপুত্র পেতেন। হুমায়ুন শাওনের যখন বালিকা বয়স, তখন থেকে তার পিছনে লেগেছেন।চমকে দেয়া, আকর্ষন গড়ে তোলার ক্যারিশমা তার ছিলো। শাওনের কোমল কিশোরী মনকে তিনি তার জীবনের আলো হারিয়ে গেছে বলেই হোক,গুহার চিত্রআঁকার বাতি হবার আবেদন জানিয়েই হোক,সেন্ট মার্টিনের ঘরে তার শেষ জীবনের সাথী হবার আকুতি জানিয়েই হোক,ধর্মমন্ত্রী থেকে নানা পরিচয়ে দিনের পর দিন ফোন করেই হোক জয় করেছেন।
আর হুমায়ুনের দাম্পত্যজীবনের ঝড় কি আগে ওঠেনি? আগুনের তাপে পুড়েনি?কত অভিনেত্রীওতো পাগল হয়েছিলেন তাকে বিয়ে করতে!বন্ধুর মেয়েও। অচেনা বালিকা ভক্ত তার বাড়িতে এসে ওঠেনি?বা ময়মনসিংহের সেই তরুনী? কে না!শাওনকে দেখেছি ধানমন্ডির বাড়ি থেকে সার্কিট হাউজ রোডের ডিএফপির ফ্লোরে নাটকের শ্যুটিংকালে শীলাদের সাথে আড্ডায়। শাওনকে বিয়ে করার আগে হুমায়ুন আলাদা চারবছর নি:সঙ্গ জীবন কাটাননি?সন্তান ভাইবোন কে খোঁজ নিয়েছে?হার্টএটাক হলেও শাওন আর অন্যপ্রকাশের মাজহারই ছুটে গেছে। মৃত্যুতে পাশে থেকেছেন যেমন।
মানুষের জীবনে অনেক কিছু ঘটে,জনপ্রিয়দের জীবনের ঘটনা বাইরে আসে,খবর হয়। হুমায়ুন শাওনেরও হয়েছে। শাওনকেই কেনো অপরাধী করে আক্রমন করতে হবে। হুমায়ুন বেদনা থাকলেও বৈধভাবে গুলতেকিনের সাথে মর্যাদার সাথে দাম্পত্যজীবনের ইতি ঘটিয়েছেন। কেউ কারো সম্পর্কে অসম্মান দেখাননি। অনেকেতো বাড়িতে দোজখ বানিয়ে,বহুগামী জীবন কাটিয়ে,একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে চাকরবাকর থেকে পথে পথে নোংরা অভিযোগ করে একখাটে ঘুমাতে যান। সেটাও তাদের ব্যক্তিগতজীবন। কারো রান্নাঘর বা বেডরুমে উঁকি দেয়া সভ্যতা ভদ্রতা নয়।
শাওনতো কাউকে তিনবছর প্রেমে ঝুলিয়ে হঠাৎ ছেড়ে আরেকজনকে লোভে বিয়ে করেননি। কাউকে শয্যায় রেখে, উঠে গিয়ে আরেকজনের গলায় ঝুলে পড়েননি!অনেকে অনেক অপরাধ করেও বিতর্কের উর্ধ্বে থাকেন।
মেহের আফরোজ শাওন নিজের পরিচয়ে পরিচিত হয়ে সততার সাথে তার প্রেমের পুরুষকে বিয়ে করেছেন। হুমায়ুনসহ সবাই সুখী হবার অধিকার রাখেন,শাওন না কেনো?এখানে একটি সরল সৎ মেয়ে ৫৬বছর বয়সের মানুষকে বিয়ে করে অকালেই হারিয়েছে।তবু তাকে নিয়ে সমালোচনা আক্রমনে কারো বুক কাঁপেনা?
আমি শাওনের ধৈর্য্য কারো নোংরা আক্রমনের জবাব না দেওয়া এবং দুটি ছোট শিশুকে নিয়ে নিজের মতোন আনন্দে থাকার চিত্রপট দেখে অবাকই নই,অভিভূত মুগ্ধ হই। শাওন প্রেম বিয়ে করার অধিকার রাখলেও করেননি। এটা তার একান্ত নিজের ইচ্ছে। তার দুঃখ যন্ত্রনা কাউকে দেখতে দেননা এটা তার ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট। তিনি বিয়ে করবেন নাকি হুমায়ুনের ছায়াসঙ্গী হয়েই বাকি জীবন রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে কাটিয়ে দেবেন,সেটা তার বিষয়।
শাওন বলেছেন,তিনি বান্ধবীর বাবাকে বিয়ে করেননি। বন্ধুর কন্যার সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিলো। শীলাওতো তার মায়ের বয়সী একজন শিক্ষককে ঘর ভেংগে বিয়ে করেছেন!সেই শিক্ষকও তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছেন।
তো কি হয়েছে?কারও সাথে কারও না হলেও, প্রেমহীন জীবনে জোর করে থাকতে হবে?ভালোবাসলে,একজনকে ছাড়া অন্যজন অচল মনে করলে এক হতে পারবেনা?এটা হয়না। এটা প্রতিটি মানুষের সিদ্ধান্তগ্রহনের বিষয়। সবার স্বাধীনভাবে সুখী হবার,আইন মেনে সিদ্ধান্ত গ্রহনের অধিকার রাখেন।
শাওন শীলা সবাই তা করেছেন। শাওনকে যারা আক্রমন করেন তাদের বলবো,সেতো হিসেব কষে এটা করেনি,হিসেব কষলে এভাবে আত্নবলিদান প্রেমের জন্য কেউ দিতে পারে? শাওন দিয়েছে।তার দিকে যখন তার বাবা মা তাকান,তখন তাদের বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে?সবাই সুখী হোক,অনন্দময় জীবনযাপনে থাক সততার সাথে।
আমরা পাহাড়,সাগর,নদী, উড়ে যাওয়া পাখি, ফুলের বাগান,সবুজ বৃক্ষরাজি,বৃষ্টি জোছনা,গোধূলি সন্ধা ও সূখী যুগল দেখে মুগ্ধ হই।আসুন মানুষকে সূখী হতে দেখে আনন্দিত হই।
লেখক –পীর হাবিবুর রহমান
নির্বাহী সম্পাদক – বাংলাদেশ প্রতিদিন